বাংলাদেশের চিংড়ি খাতে নতুন এক সম্ভাবনার নাম ভেনামি চিংড়ি। বিদেশ থেকে আমদানি করা এই বিশেষ প্রজাতির চিংড়ির একটি মা চিংড়ির দাম ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এই চিংড়ি চাষে সময় ও ঝুঁকি কম, আয় বেশি, যা কৃষকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছে ভেনামি জাত। এটি রোগ প্রতিরোধে সক্ষম, উৎপাদনক্ষমতা বেশি এবং চাষেও লাভজনক। পোনা ছাড়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই এই চিংড়ি বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে ওঠে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। কিন্তু উৎপাদনের দিক থেকে বাগদা পিছিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বাগদা চিংড়ি ১৫০ দিনে ৩০–৫০ গ্রাম ওজনের হয়, আর ভেনামি মাত্র ১১০ দিনেই পৌঁছে ৩৫–৪০ গ্রাম ওজনে। ফলে কম সময়ে, কম ঝুঁকিতে বেশি আয় করার সুযোগ থাকায় খামারিরা ধীরে ধীরে ভেনামি চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
২০২১ সালে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয় ভেনামি চিংড়ির চাষ। ইতিবাচক ফলাফল পেয়ে কক্সবাজারে গড়ে ওঠে নিরিবিলি ফিশারিজ লিমিটেড ও দেশ বাংলা হ্যাচারি—যা দেশের একমাত্র দুটি সরকার অনুমোদিত ভেনামি চিংড়ি পোনা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তারা প্রথমবারের মতো বাজারে পোনা ছাড়ে এবং এরপর থেকেই দেশব্যাপী খামারিরা ভেনামি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, এই জাতের পোনা এখনো সহজলভ্য নয় এবং উৎপাদন ও চাষাবাদের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে যথাযথভাবে চাষ করা হলে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চিংড়ি উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও দেশ এগিয়ে যাবে।